স্ট্যাচু অব লিবার্টির

পোস্টটি লিখেছেন আমারস্পট টিম।

বর্তমান বিশ্বে আশ্চর্য যে সকল প্রতিমূর্তি বা সৌধ আছে স্ট্যাচু অব লিবার্টি তার মধ্যে অন্যতম। স্ট্যাচু অব লিবার্টিকে আমরা প্রায় সবাই জানি এবং চিনি। তবে আমরা অনেকেই হয়তো জানি না এই সৌধ বা প্রতিমূর্তিটা কিভাবে তৈরি হয়েছে বা কারা তৈরি করেছে। সৌধটা যখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত তখন আমরা ভাবতে পারি এই প্রতিমূর্তিটা আমেরিকার তৈরি। কিন্তু তা নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্মোৎসব পালন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের জনগণের মধ্যে মৈত্রীর বন্ধন স্মৃতিরক্ষার জন্য স্ট্যাচু অব লিবার্টি বা স্বাধীনতার প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা হয়েছিল।

বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ফ্রান্স ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি উপহার দিয়েছিল। আসুন আমরা বিশ্বের বিখ্যাত ঐতিহাসিক এই স্থাপনা সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে জানার চেষ্টা করি।

পর্যটন বা দর্শনীয় হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম দর্শনীয় বস্তু ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের সমুদ্রের বুকে লিবার্টি নামক দ্বীপে অবস্থিত এই স্থাপনাটি। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী দ্বীপটিতে এসে ভিড় জমায় এই স্থাপনাটি দেখতে। এই স্থাপনাটির প্রকৌশলী ছিলেন ফ্রেডেরিক অগাস্ট বার্থোল্ডি, গুস্তাভ আইফেল ও রিচার্ড মরিস হান্ট। গুস্তাভ আইফেল ছিলেন স্থাপনাটির কাঠামো তৈরির প্রকৌশলী ও রিচার্ড মরিস হান্ট ছিলেন স্থাপনাটির পাদমূল তৈরির প্রকৌশলী। বিখ্যাত এই স্থাপনাটির বিস্তৃতি ১২ একর জায়গা জুড়ে। ফ্রান্সে স্থাপনাটির নির্মাণ শুরু হয় ১৮৭৫ সালে ও নির্মাণ শেষ হয় ১৮৮৪ সালে। আশ্চর্যময় এই স্থাপনাটির নির্মাণ কাহিনী নিয়ে রয়েছে একটি ইতিহাস।

১৮৬৫ সালের এক রাতের কথা। ফরাসি ভাস্কর ফ্রেডেরিক অগাস্ট বার্থোল্ডি ও তার বন্ধু এডওয়ার্ড ডি ল্যাবোলেঁ সেদিন ল্যাবোলেঁর বাড়িতে বসে নৈশভোজ পরবর্তী আড্ডা দিচ্ছিলেন। ওই আড্ডাতেই কথায় কথায় ল্যাবোলেঁ তার একটা গোপন স্বপ্নের কথা বলে ফেলেন বার্থোল্ডিকে।

ব্যক্তিগত জীবনে ল্যাবোলেঁ ছিলেন শিক্ষক ও রাজনীতিবিদ, এছাড়াও তিনি ছিলেন সর্বোপরি যুক্তরাষ্ট্র প্রেমিক। ল্যাবোলেঁর স্বপ্ন ছিল ফরাসি-মার্কিন বন্ধুত্বের চিহ্ন হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে বড়সড় একটা উপহার দেবেন। যাতে মার্কিনীদের স্বাধীনতা প্রাপ্তিতে ফরাসিদের যে বিরাট অবদান সেটাকে তারা আজীবন স্মরণে রাখে।

ল্যাবোলেঁর পরিকল্পনাটা শুনে বার্থোল্ডি যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন। কারণ, তিনিও তো এমন একটা সুযোগ খুঁজছিলেন! বার্থোল্ডির স্বপ্ন অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রিক ছিল না। তিনি বিরাটকায় কোনও একটা স্থাপনা তৈরির সুযোগ খুঁজছিলেন। সম্ভব হলে সেটা কোনও সমুদ্র উপকূলে স্থাপনেরও স্বপ্ন দেখতেন তিনি।

১৮৩৪ সালের ২ আগস্ট ফ্রান্সের কোলমার শহরে জন্ম নেওয়া বার্থোল্ডি চিরদিন বড় বড় স্থাপনার নেশায় কাটিয়েছেন। বয়স ২০ পার হতে না হতেই বিরাট আকারের ভাস্কর্য ও স্থাপনা নির্মাণের স্বপ্ন বার্থোল্ডির পাগলামিতে পরিণত হয়। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের উপযুক্ত স্থান ও পৃষ্ঠপোষক খুঁজতে দুনিয়া চষে বেড়িয়েছিলেন তিনি। ১৮৫৬ সালে মিসরে গিয়েছিলেন প্রাচীন স্থাপত্য ও ভাস্কর্য দেখতে। ওই যাত্রা পথে সুয়েজ খাল মনে ধরে গিয়েছিল তার। পরে মিসর সরকারকে অনুরোধ করেছিলেন সুয়েজ খালের মুখে একটা বিরাট নারীমূর্তি স্থাপনের অনুমতি দিতে। কিন্তু সে প্রস্তাব গৃহীত হয়নি।

বার্থোল্ডির মনে এরপর দাগ কাটে নিউইয়র্ক শহরের পোতাশ্রয়। ১৮৭১ সালে প্রথম আমেরিকা সফরের সময় শহরটিতে ঢুকতে গিয়েই তার মনে হয়েছিল, এখানে হতে পারে স্বপ্নের সেই স্থাপনা। স্থাপনাটি হবে মশাল হাতে একটি নারীমূর্তি, এমন কল্পনাও করেছিলেন তিনি।

বার্থোল্ডির কল্পনাটা কল্পনাই থেকে যেত। কিন্তু ল্যাবোলেঁর প্রস্তাব শুনে নড়েচড়ে বসলেন বার্থোল্ডি। ভাবলেন এবার তার স্বপ্ন সত্যি হবে। স্বপ্ন অবশ্য এত সহজে সত্যি হলো হয় নি। এই পরিকল্পনার প্রায় ১০ বছর পর ফ্রান্সের সরকার পরিবর্তনের পরই তা সম্ভব হয়েছিল।

যার ওপর স্থাপিত হয়েছে এক বিরাট আকৃতির মহীয়সী নারীমূর্তি। হাতে প্রজ্বলিত অগ্নিশিখার মতো টর্চ। যেটা দেখা যায় সমুদ্রের বহুদূর থেকে। এটা আমেরিকার স্বাধীনতার প্রতীক মনুমেন্ট। তৈরি হয়েছে তামা ও লোহা দ্বারা। যাকে ১৯২৪ সালে আমেরিকান জাতীয় মনুমেন্ট ঘোষণা করা হয়েছে। মূর্তিটির মাথার মুকুটের ডান হাতে অনির্বাণ টর্চ। এটি পৃথিবীর মূর্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ মূর্তি। যার উচ্চতা ১৫১ ফুট ১ ইঞ্চি এবং মাটি থেকে টর্চ পর্যন্ত উচ্চতা ৩০৫ ফুট ১ ইঞ্চি। টর্চটি জ্বালানো থাকে নিচের বিদ্যুৎ থেকে। এ মনুমেন্টটি তৈরি হয়েছিল ফরাসিদের চিন্তাধারার ওপরে।

ফ্রান্সের রাজা তৃতীয় নেপোলিয়নের সময় এডওয়ার্ড রিনি লাবুলাই নামে এক ফরাসি পণ্ডিত প্রথমে প্যারিসে বসে চিন্তা করেন, একটা বিরাট সিভিল ওয়ারে জিতে আমেরিকানরা একটা প্রভূত সম্পদশালী জাতিতে পরিণত হতে চলেছে। তাই ওদের মধ্যে এমন একটা কিছু করা দরকার, যা হবে ফরাসি আমেরিকান মৈত্রীর বন্ধন। তিনি তদানীন্তন একজন বিখ্যাত ভাস্কর বার্থোল্ডির সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ করেন। ১৮৭১ সালে বার্থোল্ডি যুক্তরাষ্ট্রে আসেন মনুমেন্টের প্রস্তাব নিয়ে ও স্থান নির্বাচনের জন্য। তিনি সমুদ্র পারের নিউইয়র্ক শহরের বর্তমান দ্বীপটি পছন্দ করেন। প্রায় দু’বছর ফরাসি ও আমেরিকান ভাস্কররা এ মূর্তি তৈরিতে শ্রম দেন। একে ৩০০ খণ্ডে তৈরি করা হয় এবং উপর পরে আড়াই মিলিমিটার পুরু তামার শিট জড়িয়ে দেওয়া হয়। ১৮৮৪ সালে এটা তৈরি সম্পন্ন হলে প্যারিসে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। ১৮৮৫ সালে এটি খণ্ড-বিখণ্ড করে টুকরা টুকরা হিসেবে আমেরিকায় পাঠানো হয়। এরপর শুরু হয় সংযোজন পর্ব। নিউইয়র্ক পোতাশ্রয়ের কাছে নির্ধারিত দ্বীপে এরই মধ্যে তৈরি করে ফেলা পাদমূলের ওপর ধীরে ধীরে জোড়া দিয়ে দাঁড় করিয়ে ফেলা হয় স্ট্যাচু অব লিবার্টিকে।

অবশেষে আসে ১৮৮৬ সালের ২৮ অক্টোবর। অভূতপূর্ব এক লোকসমাগম হয়ে এখানে। ধারণা করা হয় প্রায় ১০ লাখ লোকের সমাবেশ হয়েছিল সেদিন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সেই সব ধনী যারা এই কাজে একটি পয়সাও দেননি, তারাও আসেন উৎসব দেখতে। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড উন্মোচন করেন দ্য লেডির মুখ। কিন্তু হায়! এমন দিন আর দেখে যেতে পারলেন না এই স্থাপনার স্বপ্নদ্রষ্টা ল্যাবোলেঁ। কারণ, স্ট্যাচু অব লিবার্টির উদ্বোধনের ৩ বছর আগে ১৮৮৩ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

প্রতিদিন শত শত পর্যটক এখানে আসেন বিখ্যাত এই স্থাপনাটি দেখতে। ২২তলা উঁচু মূর্তিটির মাথার কাছে পৌছাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন ধরে দাঁড়াতে হয় পর্যটকদের। মূর্তিটির পাদানিতে কয়েকটি বড় বড় হল রুম আছে। যার মধ্যে আছে মিউজিয়াম। নতুন ইমিগ্র্যান্টদের ছবি এবং পূর্ণ পরিচয়, কিভাবে মূর্তিটি তৈরি হলো ইত্যাদি তথ্য রয়েছে এই মিউজিয়ামে। আরও আছে প্রতিটি তলায় মূর্তিটির বিশিষ্ট অংশ। যেমন মাথা, প্রজ্বলিত টর্চ ইত্যাদি খণ্ড খণ্ড বিরাট মূর্তি ও ছবি। ১৯৮৬ সালে আবার নতুন করে ফরাসি ও আমেরিকান প্রকৌশলীরা ওটাকে মেরামত করে অংশবিশেষ বদলিয়ে নতুন অংশ লাগিয়ে দেন। প্রজ্বলিত টর্চটাও গোল্ড প্লেটেড কপার ফ্রেম দ্বারা বদলানো হয়। ১৮৮৬ সালের ২৮ অক্টোবর স্ট্যাচু অব লিবার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। ১৯৮৬ অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতায় এর শতবার্ষিকী উদযাপিত হয়। ১৯২৪ সালে এটাকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৫৬ সালে বেডলুস দ্বীপকে লিবার্টি দ্বীপ বলে নতুন নামকরণ করা হয়। এই স্থাপনাটির তদারকির দায়িত্বে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পার্ক সার্ভিস।

এবার জানা যাক এই বিখ্যাত স্থাপনাটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য। এই স্থাপনাটির পাদমূলের উচ্চতা ৮৯ ফুট, পাদমূল থেকে টর্চের উচ্চতা ১৫১ ফুট ১ ইঞ্চি, ভিত্তির পরিমাপ ৬৫ ফুট, মাটি থেকে টর্চের উচ্চতা ৩০৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। প্রতিমূর্তিটির গোড়ালি থেকে মাথার উচ্চতা ১১১ ফুট ৬ ইঞ্চি, হাতের দৈর্ঘ্য ১৬ ফুট ৫ ইঞ্চি, তর্জনী ৮ ফুট ১ ইঞ্চি, এক কান থেকে আরেক কানের দূরত্ব ১০ ফুট, দুই চোখের দূরত্ব ২ ফুট ৬ ইঞ্চি, নাকের পরিমাপ ৪ ফুট ৬ ইঞ্চি, কোমর ৩৫ ফুট ও মুখ ৩ ফুট। প্রতিমূর্তিতে ব্যবহৃত হয়েছে তামা ২৭.২২ মেট্রিক টনেও ১১৩.৪ মেট্রিক টন স্টিল। মূর্তিটির মোট ওজন ২০৪.১ মেট্রিক টন। মূর্তির হাতে ধরা বইয়ের দৈর্ঘ্য ২৩ ফুট ৭ ইঞ্চি। বইটি চওড়া ১৩ ফুট ৭ ইঞ্চি ও পুরু ২ ফুট। মূর্তির মুকুটে জানালার সংখ্যা ২৫ ও মুকুটে কাঁটার সংখ্যা ৭টি। যেগুলো দ্বারা সাতটি মহাদেশকে বুঝানো হয়েছে।

শেষ কথায় বলা যায়, স্ট্যাচু অব লিবার্টি আমেরিকানদের দেওয়া ফরাসিদের একটি বড় উপহার। ফরাসিদের স্মরণ রাখা ও মার্কিনদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ফরাসিরা এটি যুক্তরাষ্ট্রকে উপহার দিয়েছিল। যার ফল স্বরূপ মার্কিনদের সাথে ফরাসিদের সর্বদা সুসম্পর্ক বজায় আছে।

নিউপোর্ট টাওয়ার

পোস্টটি লিখেছেন আমারস্পট টিম

আমাদের এই মহাবিশ্বে রহস্যময় স্থানের কোনও শেষ নেই। বিশ্বে রহস্যময় যেসকল স্থান রয়েছে তার অধিকাংশই রহস্যময় হয়েছে তাদের প্রাচীন ঐতিহ্যের কারণে। বিশেষ করে প্রাচীন আমলে তৈরি করা এমন অনেক প্রাসাদ বা স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যেগুলোর প্রকৃত ইতিহাস আজও অজানা, ফলে এই সকল বাড়ি, গৃহ বা স্থাপনাগুলো আজও সবার কাছে এক রহস্য। আর তেমনই রহস্যময় একটি স্থাপনার নাম নিউপোর্ট টাওয়ার।

নিউপোর্ট টাওয়ারটি আরও কয়েকটি নামে পরিচিত, যার মধ্যে রয়েছে রাউন্ড টাওয়ার, নিউপোর্ট স্টোন টাওয়ার বা ওল্ড স্টোন মিল। গোলাকার আকৃতির প্রাচীন এই টাওয়ারটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোদ দ্বীপের নিউপোর্ট এলাকার টাউরো পার্কে অবস্থিত। এই টাওয়ারটি সম্পূর্ণ পাথরের তৈরি। বিখ্যাত এই টাওয়ারটি নির্মাণ করা হয় ১৭ শতকের মাঝামাঝি সময়ে। টাওয়ারটি উত্তর-দক্ষিণ দিক থেকে এর ব্যাস ২২ ফুট ২ ইঞ্চি এবং পূর্ব-পশ্চিম দিক থেকে এর ব্যাস ২৩ ফুট ৩ ইঞ্চি। টাওয়ারটির উচ্চতা মোট ২৮ ফুট। এক সময় এই টাওয়ারের দেয়ালগুলো সাদা প্লাস্টার করা ছিল। বর্তমান সময়েও বাহিরের দেয়ালে তার কিছু নমুনা দেখা যায়। সমস্ত টাওয়ারটি আটটি কলামের উপর দাড়িয়ে আছে। যার মধ্যে দুটি কলাম অন্য ছয়টি কলামের চেয়ে আকারে বড়। কলামগুলোর গায়ে ডোরাকাটা দাগে অঙ্কন করা হয়েছে নানা প্রজাতির প্রাণীর ছবি, নাম ও আরও অনেক কিছু দ্বারা। টাওয়ারের দেয়ালগুলো শক্ত ও পুরু করে তৈরি করা। এর প্রতিটি দেয়াল ৩ ফুট পুরু। টাওয়ারটির অভ্যন্তরের ব্যস প্রায় ১৮ ফুট। এই টাওয়ারে মোট ৭টি জানালা রয়েছে। যার মধ্যে টাওয়ারের অভ্যন্তরে রয়েছে চারটি জানালা এবং এর উপরের স্তরে রয়েছে ছোট আরও তিনটি জানালা । এই টাওয়ারের পাশে ছোট-বড় আরও কিছু টাওয়ার রয়েছে। যে টাওয়ারগুলো বিভিন্ন সময়ে তৈরি করা হয়েছে।

১৭৪১ সালের তথ্য মতে এই টাওয়ারটি ব্যবহৃত হতো পাথরের মিল হিসেবে, ১৭৬৭ সালে এটি পাউডারের মিল হিসেবে ব্যবহার করা হতো এবং আমেরিকান বিপ্লবের সময় এই টাওয়ারকে বানানো হয়েছিল ক্যাম্প ও দূরদৃষ্টি উচ্চ স্থান হিসেবে। আমেরিকান বিপ্লবের পর থেকে এই টাওয়ারকে রহস্যময় টাওয়ার বলা হয়। জিম ব্রানডন নামক একজন আমেরিকান গবেষক ও প্রকৌশলী নিউপোর্ট টাওয়ারকে কেন রহস্যজনক টাওয়ার বলা হয় এর কারণ অনুসন্ধান করার চেষ্টা করেছেন। ব্রানডন প্রাচীন এই টাওয়ারের নানা উপকরণ, লেখা, কারুকার্য নিয়ে প্রায় ১ বছর গবেষণা করে দেখেছেন যে, নিউপোর্ট টাওয়ারটি যে পাথর দ্বারা তৈরি করা হয়েছে তা প্রাচীন চুম্বক জাতীয় পাথর। এই চুম্বক জাতীয় পাথরের গায়ে রয়েছে চৌম্বক ক্ষমতা যা সহজেই লৌহ জাতীয় পদার্থকে আকৃষ্ট করতে পারে। ম্যাগনেট ছাড়াও টাওয়ারের ৩য় ও ৪র্থ তলায় পাওয়া গিয়েছিল মানুষের পায়ের চিহ্ন, প্রাচীন নকশা, মানুষের মাথার খুলি। এই সকল বিষয় থেকে অনুমান করা হয় যে, প্রাচীনকালে বা আমেরিকান বিপ্লবের সময় এই টাওয়ারটিতে মানুষ হত্যা করা হতো। কোনও পাপাচার বা অপরাধের জন্য অপরাধী ব্যক্তিকে এখানেই ফাঁসিতে ঝুলানো হতো। ১৯৪৬ সালে অধ্যাপক পি লভফোল্ড নামক একজন গবেষক সুইডেন, ও নরওয়েতে ১৪ ফুট উচ্চতার একই ধরনের টাওয়ারের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। আবার স্কটল্যান্ড ও নেদারল্যান্ড দ্বীপেও সন্ধান পাওয়া গেছে একই ধরনের টাওয়ার। যার মধ্যে স্কটল্যান্ডের টাওয়ারটি তৈরি করা হয়েছিল ১১১৫ সালে এবং নেদারল্যান্ডেরটি তৈরি করা হয়েছিল ১১৬০ সালে। নিউপোর্ট টাওয়ারের সঙ্গে এই টাওয়ারগুলোর মিল থাকায় পৃথিবী ব্যাপি একই ধরনের টাওয়ার কি কারণে প্রাচীনকালে তৈরি করা হয়েছিল সে ব্যাপারে গবেষকদের মাঝে রহস্যের সৃষ্টি করেছে। অতি উৎসাহী অনেকে বলে থাকেন গভীর রাতে নিউপোর্টে কান পেতে থাকলে শোনা যায় দূর থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে।

মার্কিন নিউপোর্ট টাওয়ারটি তৈরি করেন রোদ দ্বীপের প্রথম গভর্নর বেনেডিক্ট আর্নল্ড। ব্রিটিশ পেনি ম্যাগাজিন ১৮৩৬ সালে বর্ণনা করে নিউপোর্ট টাওয়ারের মতো একই ধরনের একটি টাওয়ার ইংল্যান্ডের চেস্টারটনে আছে। বেনিডিক্ট জন্ম গ্রহণ করেন লিমিংটন শহরে। যে শহরটি ছিল চেষ্টারটনের নিকটে। ফলে তিনি ওই টাওয়ারের অনুকরণে এই টাওয়ারটি সহজে নির্মাণ করতে পেরেছিলেন। তিনি এটি তৈরি করেছিলেন মূলত পাথরের মিল হিসেবে ব্যবহারের জন্য।

নিউপোর্ট টাওয়ারটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রাচীন একটি স্থাপনা। ফলে এই স্থাপনাকে ঘিরে মার্কিনদের রয়েছে বিশেষ আগ্রহ। আর একই ধরনের স্থাপনা বিশ্বের কয়েকটি স্থানে থাকার কারণে অনেকে এটিকে সন্দেহের চোখে দেখে থাকেন। তবে এই স্থাপনাকে কেন্দ্র করে কোনও রহস্য আছে কিনা সেটা শুধুই অনুমান নির্ভর। হয়তো এমন হতে পারে তৎকালীন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একই অনুকরণে পাথরের মিল তৈরি করা হয়েছিল। যেটা শুধুমাত্রই কাকতালীয় তবে রহস্য নয়।

আপার মিডওয়েস্ট

পোস্টটি লিখেছেন আমারস্পট টিম

বুনো পশ্চিম থেকে মিশিগানের অবস্থান অনেক দূর মনে হলেও একসময় আমেরিকার বৃহত্তম তামার খনি হিসেবে অঞ্চলটি বিখ্যাত ছিল। মিশিগানের উত্তর কিউইনার (Keweenar) পেনিসুলায় কমপক্ষে ৪০০ কপার মাইনিং কোম্পানি একযোগে কাজ করছে। পশ্চিমের শহরগুলোর মতো এখানেও তামার খনির কারণে রাতারাতি বেশ কিছু শহর গজিয়ে উঠে ছিল। আবার খনি নিঃশেষ করে মাইনাররা চলে যাওয়ার পরে শহরগুলো পরিত্যক্ত হয়। এর মধ্যে একটি আছে ডেলাওয়ের কপার ঘোস্ট মাইন। শোনা যায়, সেখানে এখন খুঁজলে নাকি তামা পাওয়া যাবে। দর্শনার্থীরা পরিত্যক্ত কুইন্সি মাইন শ্যাপটেও যায়। ১৯৩০ সালে খনিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এই খনি থেকে ২ বিলিয়ন পাউন্ড তামা উঠানো হয়েছে।

বর্তমানে আমেরিকায় ঝকঝকে চকচকে শহর থাকলেও এখানে এখনও লুকিয়ে আছে প্রাচীন কিছু শহর। শহরগুলি প্রাচীন ও লোক শুণ্য হওয়ায় এগুলি এখন ভুতের শহর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বর্তমানের আলোকোজ্জ্বল শহরগুলোর জন্য আমেরিকানরা যেমন গর্ব করতে পারে তেমনি তারা গর্ব করতে পারে এই প্রাচীন ও ঐতিহাসিক শহরগুলোর জন্যেও। কারণ, এগুলো মানব সভ্যতার এক নিদর্শন।

সিলভার সিটি

পোস্টটি লিখেছেন আমারস্পট টিম

এরিজোনার টম্বস্টোন শহরের আরেক নাম ‘দ্য টাউন টু টাফ টু ডাই’।, মারামারি, রক্তপাত, হাঙ্গামা, বিশৃঙ্খলা লেগেই থাকত। এ শহরের জন্ম মাইনিং ক্যাম্প হিসেবে। এই শহরেও এসেছিল মাইনাররা স্বর্ণ অভিযানে। স্বর্ণ অভিযান শেষে মাইনাররা চলে গেলে টম্বস্টোন আক্ষরিক অর্থেই পরিণত হয় সমাধিস্তম্ভে । এই শহরটিও আমেরিকার একটি ভুতুড়ে শহর হিসেবে পরিচিত। তবে এটাকে পুরোপুরি ভুতুড়ে শহর বলা যাবে না। কারণ এখানে এখনও কিছু লোক বাস করছে। ঊন বিংশ শতাব্দীর দালানকোঠা এখনও কিছু স্মৃতি হিসেবে আছে সেখানে। লাইফ সাইজ কিছু ম্যানিকিনও সাজিয়ে রাখা আছে সেখানে গান ফাইটারদের স্মৃতি হিসেবে। যা সবাইকে মনে করিয়ে দেয় তাদের কাহিনীর কথা।

টম্বস্টোন

পোস্টটি লিখেছেন আমারস্পট টিম

বার্লিন শহরে মানুষ এবং প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী উভয়েই তাদের পদচিহ্ন রেখে গেছে। এক সময়ের ফুলেফেপে ওঠা সিলভার মাইনিং শহর বার্লিন ১৯১১ সাল পর্যন্ত মোটামুটি টিকে ছিল। সতেরো বছর পর শহরের কাছে ইকথিওসার নামে এক ডাইনোসরের জীবাশ্ম আবিষ্কার হয়। পঞ্চাশ ফুটেরও বেশি লম্বা ইকথিওসার ছিল সামুদ্রিক প্রাণী। ধারনা করা হয় এই ধরনের প্রাণী পৃথিবীতে বাস করত কয়েক লাখ বছর পূর্বে। ওই সময় প্রাগৈতিহাসিক সাগরের তলায় ছিল আজকের নেভাডা এবং আমেরিকার বেশির ভাগ অঞ্চল। বার্লিন শহরে অন্তত ৩৭টি ইকথিওসার জীবাশ্মের সন্ধান পাওয়া গেছে। আমেরিকার এই শহরটি বর্তমানে ‘বার্লিন ইকথিওসার স্টেট পার্ক’ নামে সংরক্ষিত করা হয়েছে। বিল্ডিংগুলোর অবস্থা আগের মতো থাকলেও কিছু কিছু ভাঙা জায়গা মেরামত করা হয়েছে। শহর থেকে মাইল দুই দূরে নয়টি ফসিল সাজিয়ে রাখা হয়েছে। যা দর্শনার্থীরা আগ্রহের সাথে দর্শন করে থাকে।

বার্লিন

পোস্টটি লিখেছেন আমারস্পট টিম

আমেরিকার এই সাউথ পাস শহরে মেয়েরা সৃষ্টি করেছে ইতিহাস। উওমিংয়ের সাউথ পাস সিটির আয়ু মাত্র ছয় বছর হলেও শহরটির আছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ১৮৬৯ সালে উওমিং রাজ্যের এক আইনের সংশোধনীতে মেয়েদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়। মেয়েদের ভোটাধিকার দেওয়ার ঘটনা আমেরিকার ইতিহাসে এটাই ছিল প্রথম। পরের বছর অর্থাৎ ১৮৭০ সালে সাউথপাস সিটির ইসথার মরিস নামক এক নারী আমেরিকার প্রথম মহিলা বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৮৭৩ সালের দিকে শহরটি ছেড়ে লোকজন খুব দ্রুত চলে যেতে শুরু করে, ফলে শহরটি একেবারেই পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। তবে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত সোনার লোভে এ শহরে কিছু কিছু মানুষ অভিযান চালিয়েছিল। বর্তমানে সাউথ পাসে সে সময়ের ২৪টির মতো দালান আছে। এই দালান গুলোর মধ্যে একটি আবার জেলখানা।

সাউথ পাস

পোস্টটি লিখেছেন আমারস্পট টিম

আপনি যদি কখনও ডেথ-ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে যান তাহলে একবার নেভাডার রিওলাইট শহর থেকে অবশ্যই ঘুরে আসবেন। ভুতুড়ে এই শহরটিকে নিয়ে এ পর্যন্ত যত ছবি তোলা হয়েছে, আর কোনও শহর নিয়ে এমনটি করা হয়নি। বুনো পশ্চিমের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর রিওলাইট। রিওলাইট শহরটি মানুষ শূন্য হয়ে মরে ভূত হয়ে যায় যখন সোনার খনি থেকে সোনা উত্তোলনের কাজ শেষ হয়। অর্থাৎ এখানে স্বর্ণ খুঁজতে আসা মাইনাররা এই শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিল যখন এই শহর থেকে সোনা তোলা শেষ হয়েছিল। এটি সত্যি একটি ভুতুড়ে শহর। শহরটি ক্রমে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সারা শহর মিলে বর্তমানে দর্শনীয় জিনিস বলতে আছে একটি ট্রেন ডিপো এবং একটি বটল হাউস। শহরের বটল হাউসটি একটি অনন্য নিদর্শন। ১৯০৬ সালে মাইনার টম কোলি পঞ্চাশ হাজার বোতল দিয়ে বোতল বাড়িটি তৈরি করেন। বাড়িটির নির্মাণশৈলী সবাইকে অবাক করে দেয়।

রিওলাইট

পোস্টটি লিখেছেন আমারস্পট টিম

আমেরিকার আরেকটি ভুতুড়ে শহর ভার্জিনিয়া সিটি। সোনার খনির জন্য বিখ্যাত ছিল এ শহরটি। আউটলরা এখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে থাকলে এখানে আগমন ঘটেছিল একদল শান্তি রক্ষাকারী মানুষের। তাদের এখানে আসার উদ্দেশ্য ছিল আউটলদের দমন করে শহরে শান্তি ফিরিয়ে নিয়ে আসা। তারা এখানে এসে আউটলদের সন্ধানে গোটা শহরে চিরুনি অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গণহারে হত্যা করে। মন্টানার ভার্জিনিয়া সিটিতে একসময় দশ হাজার লোকের বাস ছিল। কিন্তু সোনার খনি থেকে সোনা ফুরিয়ে গেলে এ শহর ছাড়তে শুরু করে মানুষেরা ফলে শহরের মানুষজন একসময় ফুরিয়ে যায়। এ শহরকে পুরোপুরি মৃত নগরী বলা যাবে না। কারণ এখানে এখনও অন্তত শ দুয়েক মানুষের বসবাস আছে। শহরটিকে সরকারিভাবে জাতীয় ঐতিহাসিক স্থান বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখানে একটি ওপেন এয়ার মিউজিয়ামও আছে। ঊন বিংশ শতাব্দীর বাড়ি-ঘরগুলো নতুন করে বার্নিশ করা হয়েছে। যা এখানে আসা পর্যটকদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে।

ভার্জিনিয়া সিটি

পোস্টটি লিখেছেন আমারস্পট টিম

ক্যালিফোর্নিয়ায় বোডি শহরটি একসময় ‘রাফ এন্ড টাফ’ শহর নামে পরিচিত ছিল । আমেরিকার সবচেয়ে দুর্ধর্ষ আউটলদের আবাস ছিল এই শহরে। ঊন বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এখানে এমন কোনও দিন যায়নি যেদিন এখানে মানুষ খুন হয়নি। ১৮৮০ সালে বোডির বাইরে দুই ডাকাত একটি স্টেজ কোচ লুট করে। যাতে হাজার হাজার ডলারের সোনা ছিল। লুট করার পরে এক সময় দুই ডাকাত ধরা পড়ে এবং তাদেরকে মেরে ফেলা হয়। তবে তাদের লুট করা সোনার সন্ধান আর পাওয়া যায় নি। কেউ কেউ বলে সেই সোনাগুলো শহরের ধারে কাছে কোথাও মাটি খুড়ে মাটির নিচে ডাকাতরা পুঁতে রেখেছিল। তবে আজও উদ্ধার করা যায়নি সেই সোনাগুলো। চারদিকে পাহাড় ঘেরা বোডি শহরটি আক্ষরিক অর্থেই আমেরিকার সবচেয়ে বড় ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে বোডি শহরকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন কল্পকথা। লোকে বলে ওখানে সত্যি সত্যিই ভূত আছে। বোডির অভ্যন্তরে নির্জন খাদ থেকে মাঝে মাঝে নাকি উচ্চকিত হাসির আওয়াজ শোনা যায়, দূর থেকে ভেসে আসে গল্প করার আওয়াজ বা শোনা যায় ফিসফিসানির শব্দ। আমেরিকার মানুষেরা যারা এই শহরে গিয়েছে তারা বলে শহরটি থেকে গুরু গম্ভীর পিয়ানো বাজানোর শব্দ দূর থেকে ভেসে আসে। মাঝে মাঝে শোনা যায় গানের আওয়াজ। এই শহরে বর্তমানে মানুষজন বাস করে না। ১৮৭০ সালের দিকে শহরে তৈরি করা কাঠের দালানগুলো আজও শুধু ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ওখানে। ভয় আর কল্প কাহিনী নিয়ে বোডি আজ আমেরিকার এক ভূতুড়ে শহর।