মানুষের এই ইচ্ছে পূরণ হয়েছে ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই। ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস এড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এর সংক্ষেপে নাম নাসা (NASA)। নাসাই প্রথম চাঁদের বুকে মানুষের পদচিহ্ন এঁকে দিয়েছে। ১৯৬৯ সাল থেকে শুরু হয়ে ১৯৭২ সালের মধ্যে মোট বারোজন নভোচারী চাঁদের বুকে হেঁটে বেড়িয়েছেন।
নভোচারীরা এসব প্রশ্নের উত্তর পাবার জন্যে চাঁদ থেকে প্রায় ৮৪০ পাউন্ড পাথর নিয়ে এসেছেন। সাথে তোলা ছবি আর অন্যান্য তথ্য তো আছেই। এসব থেকে বিজ্ঞানীরা তাদের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন।
আমরা পৃথিবী থেকে চাঁদে যে কালো কালো ছোপ দেখি তা ইচ্ছে চাঁদের সমতল ভূমি। হেভি বম্বার্ডমেন্ট পিরিয়ডের একেবারে শেষের দিকে এই সমতল ভূমি সৃষ্টি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঐ সময় গ্রহাণু বা উল্কার সাথে মারাত্মক সব সংঘর্ষ হয়েছিলো। এ সংঘর্ষের ফলে চাঁদের বুকে তৈরি হয়েছে বিশাল বিশাল সব গোলাকার ক্ষত। তখন চাঁদের একেবারে ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে গলিত লাভা। এই গলিত লাভা চাঁদের বিশাল গোলাকার ক্ষত পূরণ করেছে গলিত, আগুনের লাভা একসময় শীতল হয়েছে এবং তৈরি হয়েছে সমতল ভূমি।
বিজ্ঞানীদের ধারণা মতে, হেভি বম্বার্ডমেন্ট পিরিয়ড শুরু হবার আগে পুরো চাঁদ গলিত পাথরের এক সমূদ্রে ঢাকা ছিলো। গলিত পাথরের সমুদ্র বিজ্ঞানীদের ভাষায় ‘ম্যাগমা সমুদ্র’। এই ম্যাগমা সমুদ্রের তারল্যের কারণে ফেল্ডস্পারের মতো হালকা খনিজ এসে উপরিভাগে জমা হয়েছে।
ম্যাগমা সমুদ্র যখন শীতল হয়ে জমে গেছে তখন ফেল্ডস্পার রয়ে গেছে উপরে। এ কারণেই চাঁদের ধূলোবালিতে ও পাথরের উপরিভাগে এর প্রাধান্য বেশি।
১. চাঁদ ছিলো একটি ভবঘুরে গ্রহ। আমাদের সৌরজগতে সে বাউন্ডুলের মতো ঘোরাঘুরি করছিলো। সে পৃথিবীর পাশ দিয়ে যাবার সময় পৃথিবীর মহাকর্ষে আটকা পড়ে যায়।
কিন্তু এক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকে যায় যে, পৃথিবীর মতো ছোট একটা গ্রহ কি চাঁদের মতো অতোবড় একটা জিনিসকে আটকে রাখতে পারে?
২. চাঁদ ও পৃথিবী একই ঘূর্ণায়মান পাথর ও ধুলোর মেঘ থেকে তৈরি হয়েছে।
এক্ষেত্রে সমস্যা হলো এই যে, একই যদি উৎস হবে, তাহলে চাঁদের পৃথিবীর মতো এতো ভরযুক্ত এবং গভীর অভ্যন্তরে দেশ নেই কেন?
৩. পৃথিবীর একটা অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে তৈরি হয়েছে চাঁদ। একটা অংশ বিচ্ছিন্ন হবার কারণ পৃথিবীর তীব্র ঘূর্ণনশক্তি।
মজার বিষয় হলো ঘূর্ণনশক্তির তীব্রতার কারণে যদি চাঁদের জন্ম হয় তবে পৃথিবীতে আজও সেই ঘূর্নণশক্তি থাকার কথা। তা কিন্তু নেই।
অ্যাপোলোর কার্যক্রম শুরু হবার পর ভয়াবহ সংঘর্ষ তত্ত্ব হালে পানি পাওয়া শুরু করে। হেভি বম্বার্ডমেন্টের কারণে যে গর্ত চাঁদে পাওয়া গেছে তা হয়তো একসময় পৃথিবীতেও ছিলো এবং পরবর্তী ভয়াবহ সংঘর্ষে চাঁদের ম্যাগমা সমুদ্র তৈরি হবার মতো তাপ উৎপন্ন হয়েছিলো। এবং এ সংঘর্ষ পৃথিবীকে তার অক্ষের উপর একটু বাঁকা হয়ে ঘূর্ণন গতি প্রদান করেছে। সেই মঙ্গল গ্রহের সমান জিনিসটার কিন্তু অংশ হয়ে গেছে। পৃথিবীর একাংশ এবং তাতে করে পৃথিবীর গভীর ও নিরেট অভ্যন্তরভাগ তৈরি হয়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া চাঁদে এ ঘটনা ঘটেনি তাই চাঁদের ঘনত্ব কম।
অ্যাপোলোর কার্যক্রম চাঁদ সম্পর্কে আমাদের ভাবনা বদলাতে সাহায্য করেছে। আগে চাঁদ আমাদের কাছে ছিলো রহস্যময় এক জিনিস। আর এখন আমরা জানি, ওই চাঁদ একদিন পৃথিবীরই একটা অংশ ছিলো।